আলামুত দুর্গে কয়েকজন বেহুশ তরুণের দেহ প্রবেশ করল। যখন তাদের হুশ ফিরল তারা দেখল, তারা এক অন্য জগতে প্রবেশ করেছে। বাস্তব জগত থেকে এই জগত যে বড়ই আলাদা। তারা কি স্বপ্ন দেখছে? এক অসম্ভব সুন্দর ফুলে-ফলে সজ্জিত বাগান দিয়ে তারা হাঁটছে। এটি যেন সত্যিকারের স্বর্গ। বাগানের তরুণী ও যুবতীরা তাদেরকে আলিঙ্গন করা শুরু করল। কিছুক্ষণ পর তাদের সামনে এক পানীয় এলো। সেই পানীয় পান করে তারা আবার ঘুমের ঘোরে চলে গেল। যখন তারা ঘুম থেকে উঠল তখন তাদের সামনে এক প্রবীণ ব্যক্তি এলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, “তুমি যাও এবং অমুক অমুককে হত্যা করে আস। যখন তুমি ফিরে আসবে দেবদূতরা তোমাকে নিয়ে স্বর্গে যাবে। আর যদি তোমার মৃত্যুও ঘটে তা স্বত্ত্বেও আমি তোমার দেহ বহন করে স্বর্গে নিয়ে আসার জন্য ফেরেশতাদের পাঠাব।“

তরুণগুলো স্বর্গে যাবার জন্যে খুনের নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠে। তাদের হাতে একে একে খুন হতে থাকে রাজদরবারের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা, মন্ত্রী, স্কলার, ধর্মপ্রচারক, সেনাপতি এমনকি খলিফা-শাহজাদারাও। মধ্যযুগে আরব ও পারস্যের বুকে ত্রাস সৃষ্টি করে এই গুপ্তঘাতকদের দল। ইতিহাসের পাতায় তারা হাসাসিন বা Assassin নামে পরিচিত।
উৎপত্তি
হাসাসিনরা মূলত শিয়া মতধারার নিজারি ইসমাইলি মতবাদের একটি গোষ্ঠী। হাসাসিন শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বেশ কয়েকটি মত দেখা যায়। আরবি “হাশিশ” শব্দটি দ্বারা একধরনের মাদক পানীয় বুঝায়। তাহলে হাসাসিন শব্দটির অর্থ বুঝায় হাশিশ সেবনকারী। যে কোনো হত্যাকান্ড সংগঠিত করার আগে ফেদায়ীদের হাশিশ সেবন করিয়ে প্রভাবিত করা হত। এর জন্যই লোকমুখে তারা হাসাসিন নামে পরিচিত। আবার মিশরীয় ভাষায় হাশাশিন বলতে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের বুঝায়।
মূলত হাসান ইবনে সাবাহর হাত ধরেই এই সম্প্রদায়টির উদ্ভব ঘটে। হাসান ইবনে সাবা পারস্যের কুম নগরে ১০৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার মূলত শিয়া মতধারার টুয়েলভার্স মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল। শৈশবে তিনি পরিবারসহ “রে” শহরে গমন করেন। রে শহরটি ছিল ইসমাইলি মতাদর্শ প্রচারের অন্যতম কেন্দ্র। হাসান ইবনে সাবাহ এই ইসমাইলি মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকেন এবং সেখানে আমিরা যারাব নামক এক ইসমাইলি ধর্মমতের পন্ডিতের কাছে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। তিনি তার জ্ঞান ও বিচক্ষণতার জন্য ফাতামিদ খলিফা আল মুনতাসিরের রাজসভায় স্থান পান এবং ডেপুটি মিসনারি হিসেবে নিযুক্ত হোন।
মিশরে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তার সাথে ফাতামিদ উজির আল জামালির দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আল জামালি পরবর্তীতে এই উজিরের পদে নিয়োগ দেন তার ছেলে আল আফদালকে। সেই সময়ে ফাতামিদ শাসক আল মুনতাসির রাজনৈতিকভাবে খুব দুর্বল ছিলেন। বলতে গেলে, উজিরই রাজ্য পরিচালনা করত। খলিফা আল মুনতাসির মারা যাওয়ার পর খলিফা হওয়ার কথা ছিল আল মুনতাসিরের বড় পুত্র নিজারের। কিন্তু উজির আল আফদাল খলিফার আরেক পুত্র কাসিম আহমেদকে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন এবং পরবর্তীতে নিজারকে বন্দী করে কায়রোতে এনে তার শিরোশ্ছেদের রায় দেন। নিজারের সমর্থকদের মধ্যে একজন ছিলেন হাসান ইবনে সাবাহ।
হাসান ইবনে সাবাহ ইসমাইলি ধর্মমত প্রচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে গমন করতে থাকেন। এছাড়াও ফাতামিদ খেলাফতের কর্তৃত্ব নিজারের বংশধরদের হাতে বর্তানোর জন্য তিনি চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি উত্তর ইরান, আজারবাইজান ও কাস্পিয়ান সাগরের আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে তার মিশনারি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সেখানকার মানুষ খুব দ্রুতই ইসমাইলি মতধারা গ্রহণ করতে থাকে।
সে সময় পারস্য ও এর আশেপাশের অঞ্চলসমূহে তুর্কি সেলজুকরা শাসন করত। তারা মূলত সুন্নি মতধারার ও ইসমাইলি বিরোধী ছিলেন। তাই হাসান ইবনে সাবার মিশনারি কার্যক্রম ফাঁস হলে তাকে দমন করার জন্য সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করা হয়। এজন্য সে সময় হাসান ইবনে সাবাহর একটি দুর্গের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১০৮৮ সালে হাসান আলামুত শহরে উঁচু পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকায় একটি দুর্গের সন্ধান পান। চুনাপাথর, গ্রানাইট ও আগ্নেয় শিলায় নির্মিত এই দুর্গটি ভূমি থেকে একদম ৮০০ ফূট খাড়া। এই দুর্গটি একজন আঞ্চলিক সেলজুক আমির শাসন করতেন। প্রায় অজেয় এই দুর্গটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। তিনি তার এজেন্টদের মাধ্যমে আলামুত ও এর আশেপাশের গ্রামগুলোতে ইসমাইলি দর্শন প্রচার করতে থাকেন। এমনকি দুর্গের সৈন্যদের মধ্যেও এই মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ১০৯০ সালে হাসান কোনো যুদ্ধ ছাড়াই আলামুত দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন।

কিন্তু আঞ্চলিক সেলজুক আমির আবার এই দুর্গটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই সে ব্যর্থ হয়। কোনো কোনো মতে, হাসান ৩০০০ স্বর্ণ্মুদ্রার বিনিময়ে এই দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই আলামুত দুর্গ যেন সেলজুক সমুদ্রের মধ্যে ইসমাইলিদের একখন্ড ক্ষুদ্র দ্বীপ। অন্যদিকে হাসান ইবনে সাবাহ এই আলামুত দুর্গে প্রবেশের পর পরবর্তী ৩৫ বছর ওই দুর্গ থেকে কখনো বের হন নি।
এদিকে রুদবার এবং কুহিস্থানেও ইসমাইলি মতধারার প্রভাব বাড়তে থাকে। এই ইসমাইলি মতধারার বিস্তার রোধের জন্য সেলজুক সুলতান মালিক শাহের বিশ্বস্ত উজির নিজাম-উল-মুলক রুদবার ও কুহিস্থানে সৈন্য প্রেরণ করেন। অপরদিকে সেলজুক বাহিনী আলামুত দুর্গেকেও অবরোধ করে রাখে।
হাসান জানতেন, প্রচলিত যুদ্ধে তিনি সেলজুকদের পরাজিত করতে পারবেন না। তাই তিনি সেলজুক উজির নিজাম-উল-মুলককে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। তিনি বু-তাহির নামক এক ইসমাইলি যুবককে প্রেরণ করেন নিজাম-উল-মুলকে হত্যা করতে। ১০৯২ সালে বু-তাহির নিজাম-উল-মুলককে তার নিজের তাঁবুতে হত্যা করে। সেই সাথে হত্যাকারী যুবকও নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে মারা যায়।
নিজাম-উল-মুলকের হত্যাকান্ডের পর সুন্নি মুসলিম ও ইসমাইলিদের শত্রুতা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু সামরিক শক্তিতে যে কোনো দিক দিয়েই তুর্কি সেলজুকরা অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই হাসান গড়ে তোলেন খুবই দক্ষ ও নির্দয় এক ঘাতকবাহিনী। এদেরকে বলা হত ফিদায়ী। এই ফেদায়ীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার জন্য কখনো কখনো শত্রুপক্ষের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে পর্যন্ত প্রবেশ করত। পরবর্তী দুইশ বছর ধরে এরাই সর্বমহলে হাসাসিন নামে পরিচিত হয়ে উঠে। মূলত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

সাংগঠনিক কাঠামো
হাসাসিনদের মূলমন্ত্র ছিল, “আপেক্ষিকভাবে সব কাজই সঠিক”। এই সম্প্রদায়টিকে ছয়টি স্তরে ভাগ করে পরিচালনা করা হত। তাদের নেতাকে বলা হত “শাইখুল জাবাল” বা পাহাড়ের প্রধান। তার অধীনেই ছিল বাকি সব স্তরগুলো। যেমন- “দাঈউল কিরবাল” বা প্রধান ধর্মগুরু, এরপর “দাঈ” বা ধর্মগুরু। এরপরের স্তরটি হলো “রফিক” যারা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে জ্ঞানী থাকতেন।
পঞ্চম স্তরে থাকত ফেদায়ীরা। এদের দ্বারাই হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হত। তারা অন্ধভাবে শাইখুল জাবালের আদেশ মান্য করত। তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও টার্গেটেড ব্যক্তিকে হত্যা করতে বদ্ধ পরিকর। তারা তাদের মিশনগুলো সফল করার জন্য অনেকসময় বছরের পর বছর অপেক্ষা করত। এমনকি কাজ হাসিলের জন্য এরা টার্গেটের সাথে বন্ধুত্ব পর্যন্ত করত। এরাই মূলত সর্বমহলে হাসাসিন নামে পরিচিত।
ষষ্ঠ স্তরে “লাসিক” বা শিক্ষানবিশ সদস্যরা এবং সর্বশেষ স্তরে থাকে শ্রমিকরা।
হাসাসিনদের পরিচালনা
সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের যুবকদের ফেদায়ী হিসেবে তৈরী করা হয়। তাদেরকে আশেপাশের গ্রাম ও পাহাড়ী লোকালয় থেকে সংগ্রহ করা হত। গুপ্তঘাতক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের অস্ত্রচালনা, গুপ্তচরবৃত্তি, ছদ্মবেশধারণ ও বিভিন্ন ভাষার শিক্ষা দেওয়া হত। তাদেরকে ইসলামের পাশাপাশি ইহুদী ও খ্রীস্টান ধর্ম সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া হত। যার ফলে তারা ছদ্মবেশে মসজিদ কিংবা গীর্জায় প্রবেশ করে টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করে আসতে পারত।
ফেদায়ীদেরকে মিশনে পাঠানোর আগে তাদেরকে হাশিশ নামক এক প্রকার মাদক গ্রহণ করানো হত। যার প্রভাবে তারা বেহুশ হয়ে পড়ত। এরপর হুশ ফিরলে তারা দেখত, তারা এক সুসজ্জিত বাগানে অবস্থান করছে। এই বাগানে তাদের জন্য প্রস্তুত ছিল শরাব, দুগ্ধ, মধু ও সুপেয় পানির নহর। বাগানের যুবতী তরুণীরা তাদেরকে আলিঙ্গন করত। তারা এটিকে সত্যিকারের স্বর্গ ভাবতে শুরু করে। এরপর তারা আবারও হাশিশ পান করে বেহুশ হয়ে যেত।
এরপর যখন তাদের হুশ ফিরত, তখন তাদের সামনে আসত এক প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি তাদেরকে বলত, “তুমি যাও এবং অমুক অমুককে হত্যা করে আস। যখন তুমি ফিরে আসবে দেবদূতরা তোমাকে নিয়ে স্বর্গে যাবে। আর যদি তোমার মৃত্যুও ঘটে তা স্বত্ত্বেও আমি তোমার দেহ বহন করে স্বর্গে নিয়ে আসার জন্য ফেরেশতাদের পাঠাব।“
এই স্বর্গের নেশায় ফিদায়ীরা খুন করার জন্য উন্মত্ত হয়ে উঠত। তারা নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করতে দ্বিধা করত না।
হাসান ইবনে সাবাহর মৃত্যুর পরে হাসাসিন নেতৃত্ব
১১২৪ সালে হাসান ইবনে সাবাহ মারা যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন প্রধান দাঈ উমিদ। তার সময়ে সিরিয়ায় হাসাসিনদের প্রভাব বাড়তে থাকে। এসময়ে তারা দুইজন খলিফাকে হত্যা করতে সমর্থ হয়। ১১৩২ সালে তারা কাদমুস দুর্গ দখল করে নেয়। পরবর্তী এক দশকের মধ্যে তারা সিরিয়ার আরো ছয়টি দুর্গ দখল করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাসাফ দুর্গ।
যখন সেলজুক ও ক্রুসেডারদের মধ্যে বিরোধ চলছিল তখন তাদের কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থানে দেখা গেলেও দুই শক্তিরই প্রভাব বিস্তারে তারা অদৃশ্য ভূমিকা পালন করে। কখনো তাদেরকে দেখা যায় ক্রুসেডার বাহিনীর নাইট টেম্পলারদের সমর্থন দিতে, আবার একই সময় তারা ক্রুসেডার রাজা ত্রিপলির কাউন্ট রেমন্ডকে হত্যা করে।
হাসাসিন নেতা দ্বিতীয় মুহাম্মাদের সময়ে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীকে হত্যার জন্য তিনজন ফেদায়ী প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তারা হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১১৭৬ সালে সালাহউদ্দিন আইয়ুবি হাসাসিনদের নির্মুল করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এক অজানা কারণে সালাহউদ্দিন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করে দেন। ধারণা করা হয়, সম্পূর্ণ্রুপে ধ্বংস হয়ে যাবার ভয়ে হাসাসিনরা সালাহউদ্দিনের সাথে শান্তি আলোচনা করেন। আবার বলা হয়ে থাকে, অভিযানের সময়ে হাসাসিনদের কাছ থেকে সালাহউদ্দিন পুরো পরিবার সহ হত্যার হুমকি পান, এ কারণেও সালাহউদ্দিন হাসাসিনদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করতে পারেন।
দ্বিতীয় মুহাম্মাদ মারা যাওয়ার পর তার পুত্র জালালউদ্দিন আসেন শাসক হয়ে। তিনি সকলকে ধর্মের প্রতি অনুরাগী হওয়ার জন্য জোর দিতে থাকেন। তিনি মূলত দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় শাসক আলাউদ্দিনের স্থিলাভিষিক্ত। তখন মঙ্গোলদের রাজ্যজয়ের সময়। সর্বশেষ এই মঙ্গোলদের হাতেই তাদের পতন ঘটে।
হাসাসিনদের হত্যাকান্ড
সেলজুক সম্রাজ্যের বিখ্যাত উজির নিজাম-উল-মুলককে হত্যার মাধ্যমে হাসাসিনদের গুপ্তহত্যার শুরু। পরবর্তীতে তারা বহু রাজপুরুষ, স্কলার, শাহজাদা, ধর্মীয় গুরু, সেনাপতি , মন্ত্রীদের হত্যা করে। রাজা উজির প্রজা সর্বমহলের মানুষের মনে তারা ত্রাসের সঞ্চার করে। এমনকি ক্রুসেডার রাজারাও তাদের ভয়ে সবসময় ভীত থাকত।

মুসলিম সেনাপতি ও খলিফা সালাহউদ্দিন আইয়ুবির উপরও হাসাসিনরা দুইবার হামলা করে। কিন্তু দুইবারই আল্লাহর দয়ায় ভাগ্য অনুকূলে থাকে। জেরুজালেমের রাজা “স্যার কনর্যাড অব মন্টফেরাট” যিনি মধ্যপ্রাচ্যের ক্রুসেডার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন, তাকেও হাসাসিনরা ছদ্মবেশধারী সন্ন্যাসী সেজে হত্যা করে। এছাড়াও তারা ফাতামিদ খলিফা আল আমির বি আমরিল্লাহ, আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতারশিদ, নিজাম-উল-মুলকের ছেলে ফখরুল মুলক, আব্বাসীয় শাহজাদা আর রাশিদ, কাজি সায়িদ আল আলভী সহ অনেকে। হত্যার প্রতিশোধে বিভিন্ন জায়গায় ইসমাইলিদের উপর চলতে থাকে অত্যাচার ও নির্যাতন।
হাশাশিনদের পতন
১২৫৬ সাল, মঙ্গোলদের আক্রমণে ধূলিসাৎ হচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার রাজ্যগুলো। মঙ্গোল আক্রমণের জোয়ার থেকে হাসাসিনদের রক্ষার জন্য আলাউদ্দিনের পুত্র রুকনুদ্দিন চেষ্টা করতে থাকেন। এক সময় রুকনুদ্দিন তাদের জীবনের বিনিময়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়। কিন্তু মঙ্গোল নেতা হালাকু খান বিশ্বাসঘাতকতা করে আলামুত দুর্গের প্রাপ্তবয়স্ক সব হাসাসিন যুবকদের হত্যা করে। যার ফলে হাসাসিনদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। মঙ্গোলদের হাতে আলামুত দুর্গের পতনের পর হাসাসিনদের শক্তি প্রায় ধ্বংসের প্রান্তে পৌঁছে যায়।

১২৬০ সালে মামলুকরা মঙ্গোলদের থেকে আলামুত দুর্গ উদ্ধার করেন। এরপরেও হাসাসিনরা মধ্যযুগে টিকে ছিল আরও কয়েক শতাব্দী, কিন্তু আগের মতো শক্তিশালী হয়ে তাদের আর দেখা যায় নি।
https://roar.media/bangla/main/history/assassin-in-medieval-muslim-world
https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Hassan-i_Sabbah
https://www.worldhistory.org/The_Assassins/
গুপ্তসংঘ – নিক হার্ডিং